প্রকৃতির অনিন্দ্য নিকেতন মহেড়া জমিদার বাড়ী অপরূপ সৌন্দর্যে নয়নাভিরাম। তার রূপশোভা বিস্তার করে কালের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক উজ্জ্বল ভাস্কর্য। নিভৃত পল্লীতে ছায়াঘেরা, পাখী ডাকা নির্মল নির্ঝর শান্ত পরিবেশ আকুল করে দর্শকদের। আগন্তুককে একবার নয় বারবার এই সৌন্দর্য দেখার হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় এখানকার রকমারি দেশী-বিদেশী ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারী পাতাবাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান। গাছে গাছে সকাল সন্ধ্যা পাখির কলকাকলিতে মুখর, সৌম্য-শান্ত কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আপনাকে দিবে এক অন্যরকম ভ্রমানুভুতি। চারদিকে নানা বৈচিত্র্যের ফুলের বর্ণ ও গন্ধের সমারোহ। যেন নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য। এক কথায় যেন ধরায় স্বর্গধাম। ধারনা পাওয়া যায় স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে ভবনসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কালের বিবর্তনে ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে শোভিত হয়ে উঠে কালের স্বাক্ষী এ দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ী।
দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ীর রয়েছে এক কলঙ্কিত স্মৃতি। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তন্মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক পন্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনিন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং নোয়াই বণিক ছিলেন। ইতিহাস কলঙ্কিত সেই রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে মহেড়া জমিদার বাড়ীতে। যে দেশের জন্য, যে দেশের মানুষের জন্য মহেড়া জমিদার পরিবার নিজেদের শত প্রাচুর্য ভুলে এলাকার উন্নয়নে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন, সেই এলাকার রাজাকার আল-বদরদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাকিস্থানী বাহিনীর এই চরম হত্যযজ্ঞে জমিদার পরিবার শুধু হতাশ হননি, শত বছরের সাজানো জমিদার বাড়ী আর কোটি টাকার সম্পদ ফেলে চরম ঘৃণা আর ক্ষোভ নিয়ে লৌহজং নদীর নৌপথে নৌকা যোগে চলে যান বাংলাদেশ ছেড়ে। অতঃপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বায়েজীদ সাহেবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিবাহিনী জমিদার বাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ীটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ মহতী কাজটি করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান। পুলিশের প্রশিক্ষণকে আধুনিক এবং যুগোপোযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। আর পুলিশের ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন হওয়ায় ট্রেনিং পরিচালনার জন্য জমিদার বাড়ীটির যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণসহ নতুন নতুন স্থাপনা তৈরী করার কারনে পুরানো স্থাপত্য কলার অপরুপ এই জমিদার বাড়ীটির সৌন্দর্য্য শুধু অক্ষত থাকেনি বরং তার কলেবর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।