Wednesday, November 22, 2017

চলুন ঘুরে আসি নাগরপুর জমিদার বাড়ি (চৌধুরী বাড়ী) কমপ্লেক্স

ঊনবিংশ শতাব্দী । ইতিহাস থেকে যতদুর জানা যায় – সুবিদ্ধা-খাঁ-র সূত্র ধরেই চৌধুরী বংশু নাগরপুরে জমিদারী শুরু করেন। চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ যদুনাথ চৌধুরী। প্রায় ৫৪ একর জমির উপর জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের বংশক্রমে দেখা যায় – এমন তার তিন ছেলেঃউপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী ।

বৃটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন মুখীন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ।তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী। পাশ্চত্য এবং মোঘল সংস্কৃতির মিশ্রনে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এই বৈঠকখানা বিল্ডিং এর উপরে ছিল নহবতখানা।



সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রতিদিন ভোর সকালে সানাই-এর ভৈরবী ধ্বনীতে চৌধুরী বংশের তথা এলাকার প্রজাবৃন্দের ঘুম ভাঙ্গত। শোনা যায় রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরীকে নাগরপুরে রেখে সম্পূর্ণ রাজধানী কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। চৌধুরী বাড়ীর রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত- ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে সৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নিল বাঘ (কেতকী) এবং সিংহ(দ্যুতি)। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ীর এই মুল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ।

চৌধূরীবাড়ীর অন্যান্য স্থাপনা

ঝুলন দালান: প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন শিল্প কর্মে মন্ডিত চৌধুরী বংশের নিত্যদিনের পূজা অনুষ্ঠান হত এই ঝুলন দালানে। বিশেষ করে বছরে শ্রাবনের জ্যোৎস্না তিথিতে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাটক, যাত্রা মঞ্চায়িত হত। এখানেই চৌধুরী বংশের শেষ প্রতিনিধি মিলন দেবী (মিলন কর্ত্রী) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চৌধুরীদের উপাসনা বিগ্রহ ‘‘বৃন্দাবন বিগ্রহ’’ -এর নিরাপত্তা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

ঘোড়ার দালান

জমিদারী পরিচালনা এবং বাবসায়িক প্রয়োজনে চৌধুরীবাড়ীতে সুঠাম সুদৃশ্য ঘোড়া পোষা হত। আর এই ঘোড়া এবং তার তদারকীতে নিয়োজিতদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় শৈল্পিক কারুকাজ খচিত এই স্থাপনা। যা জমিদারদের ঘোড়ার দালান হিসাবে পরিচিত।

Share:

Thursday, November 2, 2017

চলুন ঘুরে আসি করটিয়া জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের যে কয়টি জমিদার বাড়ী সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাথে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে করটিয়া জমিদার বাড়ী তার মধ্যে অন্যতম। টাঙ্গাইল জেলায় বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ী রয়েছে কিন্তু সব গুলোকে ছাপিয়ে ইতিহাস আর ঐতিয্যে করটিয়া জমিদার বাড়ী আলাদা স্থান করে নিয়েছে। টাঙ্গাইল শহর হতে ১০ কিঃ মিঃ দূরে পুটিয়া তীর ঘেসে আতিয়ার চাঁদ খ্যাত জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী জমিদার বাড়ী। প্রাকৃতিক ও নিরিবিলি পরিবেশের এই জমিদার বাড়ীটি প্রায় ১.০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ০.৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা। যেখানে রয়েছে রোকেয়া মহল, রানীর পুকুর ঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়ী সংলগ্ন স্থাপতের আদলে গড়া মসজিদ, একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য।মসজিদটিতে দুই সারিতে আটটি গম্বুজ রয়েছে। প্রথম সারিতে পাঁচটি একই আকারের ছোট গম্বুজ রয়েছে এবং দ্বিতীয় সারির তিনটি গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড়। মসজিদের পূর্বদিকে পুরাতন সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি ১৫ ফুট উঁচু মিনার রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণের সময় সম্পর্কে জানা যায়নি।  মোঘল ও চৈনিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জমিদার বাড়িটি প্রথম দর্শনেই আপনার মন কেড়ে নেবে। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্য শিল্পের নির্দেশন রোকেয়া মহল যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে।



জমিদারবাড়ির মূল ফটকটি বর্তমানে তালাবদ্ধ রাখা হয় এবং বাইরের কাউকে এখানে ঢুকতে দেওয়া হয়না। তাই এই জমিদারবাড়িটি দেখতে গেলে নিশ্চিত করে যাওয়া উচিত যে আপনি ভিতরে ঢুকতে পারবেন। অন্যথায় এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি আপনাকে না দেখেই ফিরতে হবে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় যে, বাংলা বৈশাখ মাসের এক এবং বারো তারিখে ছাড়াও দুই ঈদের দিন জমিদারবাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।




কিভাবে যাওয়া যায়

১। মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে নিরালা, ঝটিকা, ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন বাসে ১৩০/- টাকা থেকে ১৬০/- টাকা ভাড়ায় প্রায় তিন ঘণ্টায় করটিয়ায় পৌছাতে পারবেন। করটিয়া বাস স্টপেজের জিপিএস অবস্থান হল  (২৪°১২’৩২.০৬”উ, ৮৯°৫৮’৫০.৩৩”পু)।

 ২। করটিয়া স্টপেজ থেকে রিকশা অথবা অটোরিকশায় ১০/- টাকা থেকে ১৫/- টাকা ভাড়ায় প্রায় ১০ মিনিটে জমিদারবাড়িতে পৌছাতে পারবেন। জমিদারবাড়ির জিপিএস অবস্থান হল (২৪°১৩’২৪.৫৯”উ, ৮৯°৫৮’৪৩.২৫”পু)  এবং মসজিদের জিপিএস অবস্থান হল (২৪°১৩’২০.০৮”উ, ৮৯°৫৮’৪৬.৭৪”পু


Share:

চলুন ঘুরে আসি হেমনগর জমিদার বাড়ি

জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী এই জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন (১৮৯০)। তিনি তার এলাকার মানুষকে কঠোর হাতে শাসন করতেন। জমিদারবাড়ি অতিক্রম করতে হলে তাদেরকে খালি পায়ে ক্রমাগত মাথা ঝুঁকিয়ে আনুগত্য প্রকাশের পাশাপাশি উল্টো হয়ে হাটতে হত। এসকল নিয়ম মানতে বাধ্য করা হত তাদের।হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৮০ সালে (১২৮৬ বঙ্গাব্দ) মধুপুর উপজেলার আমবাড়িয়া রাজবাড়ি ত্যাগ করে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের সুবর্ণখালি গ্রামে নতুন রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি সেখান থেকেই জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। সুবর্ণখালি ছিল যমুনা তীরের প্রসিদ্ধ নদীবন্দর। তখন কলকাতার সাথে সহজ যোগাযোগের কারণে সুবর্ণখালিতে আসাম ও কলকাতার স্টীমার আসতো। হেমচন্দ্র চৌধুরী সহ কয়েকজন হিন্দু জমিদারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯০৫ সালে ময়মনসিংহ হতে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন সম্প্রসারণ করা হয়। যা রেল ও স্টীমার যোগে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগকে সহজ করে তোলে। হেমবাবু সুবর্ণখালি হতে সরিষাবাড়ি উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে হেরিংবন্ড করে টমটম বা পালকিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। জানা যায়, এটিই গোপালপুর উপজেলার প্রথম পাঁকা সড়ক। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশকে যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হয় সুবর্ণখালি নদীবন্দর ও হেমচন্দ্রের রাজবাড়ি। সুবর্ণখালি ঐতিহ্য হারিয়ে আজ সোনামুই/সোনামুখী নাম ধারণ করে টিকে আছে।

এছাড়াও জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর আরেকটি বাড়ি ছিল যা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার বৈলর ইউনিয়নে অবস্থিত।



বিবরণ

হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৯০ সালে (১২৯৬ বঙ্গাব্দ) শিমলাপাড়া মৌজায় নতুন একটি দ্বিতল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এটি সুবর্ণখালি থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত। উঁচু ও প্রসস্থ দেওয়ালে ঘেরা বাড়ির ভেতরে সুপেয় পানির জন্য একাধিক কূপ খনন করা হয়েছিল। সেখানে ছিল চিড়িয়াখানা, পূজাম-প, হাতিশালা ও ফুলের বাগান। পরীর দালানের সামনেই ছিল দ্বিতল নাটঘর। বাড়িটির ভেতরে ও সামনে রয়েছে পাকা সান (ইট ও সুরকির) বাঁধানো ঘাটসহ বিশাল পুকুর (দিঘি)। পরীর দালানের আশেপাশে স্বজনদের জন্য সান বাঁধা ঘাট সহ দিঘি ও পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।



কারুকার্য

ভবনের দেয়াল, পিলার, ফটকে রঙ্গিন কাঁচ ব্যবহার করে ফুল, তারা, গাছ ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। অত্যন্ত কারুকার্য মণ্ডিত, দামি কড়ি ও অপূর্ব পাথরে মোড়ানো অগ্রভাগে দুইটি পরীর ভাস্কর্যসমৃদ্ধ বাড়িটি লতাপাতার অপরুপ নকশায় তৈরি। দিল্লী ও কলকাতার কারিগর ও রাজমিস্ত্রি দিয়ে ইটসুরকির তৈরি বাড়িটি দেখে মনে হয় যেন শিল্পকর্ম। ৬০ একর জায়গার উপর শত কক্ষবিশিষ্ট এ বাড়িটিকে ডাকা হয় পরীর দালান নামে।



বর্তমান অবস্থা

এই জমিদারবাড়ির মূল ভবনটি বর্তমানে হেমনগর কলেজ করা হয়েছে। রাজবাড়ির অদুরে দক্ষিণদিকে গড়ে ওঠে বিশাল (হেমনগর বাজার) হাট। এলাকাটি হেমচন্দ্র চৌধুরীর নামানুসারে হেমনগর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে (১৯৮৯ সালে) বাড়িটিতে একটি মহাবিদ্যালয় (ডিগ্রী কলেজ) স্থাপন করা হয়েছে।


Share:

Wednesday, November 1, 2017

চলুন ঘুরে আসি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি

কিভাবে যাওয়া যায়

মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ধনবাড়ী সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। বিনিময়, মহানগর কিংবা শুভেচ্ছা পরিবহনে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছাতে পারবেন ধনবাড়ী। ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে অদূরেই জমিদার বাড়ী, ইচ্ছে করলে হেঁটে কিংবা রিকশায় পৌঁছাতে পারেন সেখানে।

বিস্তারিত


নবাব জমিদার বাড়ি ধনবাড়ীর একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নবাব প্যালেস ও বলা হয়। মূলত এর নাম নবাব বাড়ি বা নবাব প্যালেসই ছিল। কিন্তু বাড়িটি জমিদারের হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘জমিদার বাড়ি’ বলেই ডাকতেন। অতঃপর তা স্থানীয়দের কাছে জমিদার বাড়ি বলেই অধিকতর পরিচিতি লাভ করে। তাই ধনবাড়ীর যে কাউকে জমিদার বাড়ি বললেই দেখিয়ে দিবে বাড়িটিতে যাওয়ার পথ। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯২৯) যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। তাঁরই অমর কৃর্তি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস।



 

ইতিহাসঃ

নবাব জমিদারবাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই জমিদার বাড়ি খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রণ করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ লর্ড সে সময় স্টিমার দিয়ে বৈরান নদীর কয়ড়া ঘাটে আসেন। জানা যায়, সে সময় ব্রিটিশ লর্ডকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ৩০টি হাতির বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদেশের পরিবেশ-প্রকৃতিতে এককালে যে প্রচুর সংখ্যক বন্যপ্রাণী ছিল এই ঘটনা সেই স্বাক্ষ্যও দিচ্ছে।

নওয়াব আলী চৌধুরীর স্ত্রী ছিল তিন জন। বগুড়ার মেয়ে আলতাফুননাহারকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। আলতাফুননাহার ছিলেন নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে। আবদুস সোবহান ছিলেন বগুড়ার জমিদার। জমিদার নওয়াব আলীর সাথে ঈশা খাঁর বংশেরও কিছু সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তিনি ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সাইয়েদা আখতার খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নওয়াব আলীর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন সৈয়দা সাকিনা খাতুন চৌধুরানী। সাকিনা খাতুনের বংশপরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী নওয়াব আলী ১৯২৯ সালে মৃত্যুবরণ করার সময় তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত একমাত্র ছেলে  সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম ওয়াকফ নামায় লিখে যান। এই সৈয়দ হাসান আলীর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট’। বর্তমানে রিসোর্টটির মালিকানা রয়েছে হাসান আলীর একমাত্র কন্যা সৈয়দা আশিকা আকবরের নামে। যে কারণে এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্নগুলো আজও টিকে আছে সুন্দরভাবে। আর রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে লাইট হাউস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।



 

দর্শনীয় স্থানঃ

বংশাই ও বৈরান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন জমিদারবাড়িটি অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং কারুকার্যে সত্যিই মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর। তবে রিসোর্ট তৈরির পর নবাব প্যালেসে বেড়েছে চাকচিক্য এবং আধুনিকতা। চার গম্বুজবিশিষ্ট অপূর্ব মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই শতাব্দীপ্রাচীন নবাব প্যালেস।

পুরো নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেসটি প্রাচীরে ঘেরা। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দাসংবলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দুই পাশে প্রহরীদের জন্য রয়েছে দুটি কক্ষ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী  ব্রিটিশ গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন। প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর; যা এখনো আপনি দেখতে পাবেন।

ভবনের দরজা ঠিক মাঝ বরাবর নয়। এর কার্নিশে নানা ধরনের লতাপাতার নকশা আঁকানো। ভবনটিতে রয়েছে চারটি বৃহৎ কক্ষ ও কিছু ক্ষুদ্রাকার কক্ষ।দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বারান্দাতেও শোভা পাচ্ছে মোগল আমলের নবাবি সামগ্রী, সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মোগল আমলের আসবাবপত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসকান একেবারে পূর্বদিকে দেখা মিলবে শতাধিক বছরের পুরনো ৩০ বিঘার বিশালাকার দিঘি, যার কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া দায়। দিঘীর পাড়ে রয়েছে ছায়ায় ঘেরা গাছপালার সমারোহ। দিঘীতে শীতকালে নানা ধরনের পাখি আসে। ফলে শীতকালে ভ্রমণে বাড়তি কিছু আনন্দ যোগ হয়ে থাকে। সেখানে দর্শনার্থীদের ঘোরার জন্য রয়েছে দুটি সাম্পান, চড়তে পারেন আপনিও।

তাছাড়া নবাবি কায়দায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন গারোদের সংস্কৃতি ও নাচ। এ জন্য আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখানে আরো দেখতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।

পুরো জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখার পর, বের হয়ে আসলে সামনেই দেখা মিলবে নওয়াব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন’। শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের সাক্ষী হিসেবে আজও সুনামের সাথে চলছে ইনস্টিটিউশনটি।



 

রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ৫০ টাকা।

 

যেখানে থাকবেন

এখানে থাকবেন আপনি নবাবি স্টাইলে। তবে সেটা নির্ভর করবে আপনার সামর্থ্যের ওপর। রয়েছে চার ধরনের আবাসন ব্যবস্থা। মঞ্জিল (মূল রাজপ্রাসাদ), প্যালেস (কাচারি ঘর), ভিলা (২০০ বছরের পুরোনো টিনশেড ভবন) এবং কটেজ (সম্প্রতি নির্মিত টিনশেড বাংলো)। মঞ্জিল এবং প্যালেসের খাট, সোফাসহ সব আসবাবপত্র সেই প্রাচীন আমলের যা নবাবরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু ভিলা এবং কটেজে নবাবদের আসবাবপত্র পাওয়া যাবে না। ভাড়া এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দল বেঁধে গেলে পাওয়া যাবে বিরাট ছাড়। তা ছাড়া থাকতে পারেন ধনবাড়ী নওয়াব প্যালেসের অদূরে মধুপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত আদিত্য, সৈকত এবং ড্রিমটাচ নামের তিনটি আবাসিক হোটেলে। এগুলোতে রয়েছে এসি এবং নন এসি রুমের সুন্দর ব্যবস্থা।

Share:
Powered by Blogger.

The Best Places To Visit in Tangail