Wednesday, October 23, 2024

The Best Places To Visit in Tangail









Share:

Saturday, September 21, 2024

চলুন ঘুরে আসি মহেড়া জমিদার বাড়ি

 প্রকৃতির অনিন্দ্য নিকেতন মহেড়া জমিদার বাড়ী অপরূপ সৌন্দর্যে নয়নাভিরাম। তার রূপশোভা বিস্তার করে কালের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক উজ্জ্বল ভাস্কর্য। নিভৃত পল্লীতে ছায়াঘেরা, পাখী ডাকা নির্মল নির্ঝর শান্ত পরিবেশ আকুল করে দর্শকদের। আগন্তুককে একবার নয় বারবার এই সৌন্দর্য দেখার হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় এখানকার রকমারি দেশী-বিদেশী ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারী পাতাবাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান। গাছে গাছে সকাল সন্ধ্যা পাখির কলকাকলিতে মুখর, সৌম্য-শান্ত কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আপনাকে দিবে এক অন্যরকম ভ্রমানুভুতি। চারদিকে নানা বৈচিত্র্যের ফুলের বর্ণ ও গন্ধের সমারোহ। যেন নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য। এক কথায় যেন ধরায় স্বর্গধাম। ধারনা পাওয়া যায় স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে ভবনসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কালের বিবর্তনে ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে শোভিত হয়ে উঠে কালের স্বাক্ষী এ দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ী।



দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ীর রয়েছে এক কলঙ্কিত স্মৃতি। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তন্মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক পন্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনিন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং নোয়াই বণিক ছিলেন। ইতিহাস কলঙ্কিত সেই রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে মহেড়া জমিদার বাড়ীতে। যে দেশের জন্য, যে দেশের মানুষের জন্য মহেড়া জমিদার পরিবার নিজেদের শত প্রাচুর্য ভুলে এলাকার উন্নয়নে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন, সেই এলাকার রাজাকার আল-বদরদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাকিস্থানী বাহিনীর এই চরম হত্যযজ্ঞে জমিদার পরিবার শুধু হতাশ হননি, শত বছরের সাজানো জমিদার বাড়ী আর কোটি টাকার সম্পদ ফেলে চরম ঘৃণা আর ক্ষোভ নিয়ে লৌহজং নদীর নৌপথে নৌকা যোগে চলে যান বাংলাদেশ ছেড়ে। অতঃপর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বায়েজীদ সাহেবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিবাহিনী জমিদার বাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে।


       ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ীটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ মহতী কাজটি করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মান্নান। পুলিশের প্রশিক্ষণকে আধুনিক এবং যুগোপোযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। আর পুলিশের ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন হওয়ায় ট্রেনিং পরিচালনার জন্য জমিদার বাড়ীটির যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণসহ নতুন নতুন স্থাপনা তৈরী করার কারনে পুরানো স্থাপত্য কলার অপরুপ এই জমিদার বাড়ীটির সৌন্দর্য্য শুধু অক্ষত থাকেনি বরং তার কলেবর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
                                                  
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৯০ দশকের পূর্বে জমিদার বাড়ীটির পত্তন ঘটে। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। মহেড়া গ্রামে তারা ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এ সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়ি নির্মাণ করার পর তারা মহেড়া গ্রামের গরির মানুষের কাছে টাকা দাদন খাটাতে থাকেন এবং এলাকার প্রভুত উন্নতি করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। শুরু হয় জমিদারি। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ মোহন সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই শাসকরা এলাকায় বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থাসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজও করেন। এখানে আছে বড় বড় ৩টি ভবন আর কাছারি বাড়ী । এই ভবন গুলো এবং কাছারি বাড়ীর নাম মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ। আরও আছে আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের থাকার বাড়ী এবং প্রার্থনার জন্য মন্দির। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। বাড়ীর সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি নাম বিশাখা সাগর। ভবন গুলোর পিছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দুইটা পুকুর। ভবন গুলোর সামনে সুন্দর ফুলের বাগান। ভবন গুলো আর বিশাখা সাগর এর মাঝখানে রাস্তার পাশে কয়েকটা উচু গোল কারুকার্যময় স্তম্ভ। কালীচরণ লজ-এর সামনে বেশ বড় একটা খোলা যায়গা বা মাঠ।


 জমিদার বাড়ীর পূর্বপুরুষেরা হলেন- বিদু সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা ও কালীচরণ সাহা। জনশ্রুতি আছে, জমিদার তরফের সবচেয়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন মহারাজ ভবনের গিরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ আমলে সম্মানিক বিচারক ছিলেন এবং একাধারে নীতিবান ও প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি পশু (বাঘ, হরিণ, ঘোড়া) ও পাখি (ময়ূর, টিয়া, ময়না) সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি লালন-পালন করতেন। কাছারী বাড়ীতে বাঘের খাঁচা ছিল। বাঘটিকে আদর করে ফুলেশ্বরী বলে ডাকতেন। তাদের খাবার দাবারের খোঁজ খবর নিজে রাখতেন। একদিন হঠাৎ করে বাঘটি খাঁচা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে গিয়ে লুকায়। ঘনিষ্ট বন্ধু মাখন লাল চক্রবর্ত্তী ও দেহরক্ষি মদন লালকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেখানে যান এবং ফুলেশ্বরী বলে ডাকতে শুরু করলে বাঘটি এসে হাজির হয়। তারপর বাঘটিকে এনে খাঁচায় পুরে রাখেন।


 মহেড়া জমিদারগণের ছিল বিশাল বিশাল স্থাপনা। নগর ছাওয়ালী ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিল তাদের বানিজ্যিক কর্মকান্ডের বিস্তার। জমিদারদের সুবিশাল কর্মকান্ডের অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে উঠেছিল নায়েব ভবন, কাছারি ভবন প্রভৃতি স্থাপনা। তিন কক্ষ বিশিষ্ট নায়েব ভবন চমৎকার নির্মাণ শৈলীতে গড়া। তিন কক্ষ বিশিষ্ট কাছারি ভবনের স্থাপত্য শৈলীও প্রাণ জুড়ায়। অপর গোমস্তা ভবনও সুপ্রাচীন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। জমিদার কুলের নায়েব গোমস্তা প্রভৃতি দাপ্তরিক ব্যক্তিবর্গ এসকল ভবনে বসে দাপ্তরিক কর্ম সম্পাদন করতেন। মহেড়া জমিদার বাড়ীটি মূলতঃ চার টি ভবনে বেষ্টিত। যথা- মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং রাণী ভবন(কালীচরণ লজ) নামে পরিচিত।
জমিদার তরফের সন্তানেরা শুধুমাত্র বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক ছিলেন না। তাদের ছিল সুবিশাল চিত্ত। এলাকার মানুষের সামগ্রিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে তারা বিদ্যালয়, মন্দিরসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। ১৮৯০ সালে মহেড়া আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়টি জমিদার বাড়ীর আনন্দ কুমার রায় চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। গোপিনাথ জিওর বিগ্রহ মন্দির জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত। উক্ত মন্দিরের সামান্য উত্তরে আদিনিবাস ছিল। জমিদার ভবনের উত্তর পার্শ্বে তাদের প্রতিষ্ঠিত শ্রী শ্রী শ্মঁশাণ কালী মন্দির। জমিদার ভবনের দক্ষিণ পাশে বিশাখা সাগর অবস্থিত। এখান থেকে একসময় এলাকার জনগণ সুপেয় পানি সংগ্রহ করত। জমিদার বাড়ীর পিছনে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে বিশাল দুইটি দিঘি আছে যা ছিল জমিদারদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য। পানির অভাব মেটানোর জন্য গ্রামে গ্রামে অনেক কূপ খনন করে দেন জমিদারগণ। মহেড়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছাওয়ালী বাজারে এক সুবিশাল শ্রী শ্রী শ্মঁশাণ কালী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।


বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে বিশাল আম্র কানন। ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগসহ দেশী বিভিন্ন প্রজাতির আম্র বৃক্ষ শোভা পাচ্ছে। আম্র কানন ব্যতীত বর্তমান পিটিসি’র প্রায় ৪৪ একর জমিতে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা বৈচিত্র্যময় ফলের সমারোহ। এর মধ্যে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, ছবেদা, জলপাই, হরিতক ইত্যাদি ফল ও ঔষধি গাছ অন্যতম। সুবিশাল ফলজ বৃক্ষের সমারোহ ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে মাতিয়ে রাখে এ প্রাঙ্গণ সারাটি বছর। নানা প্রজাতির ফুলের সমরোহ এবং সুগন্ধে দর্শকদের আকুল করে সারা বছর। শীতকালে এখানে হাজারো চেনা অচেনা ফুলে ফুলে প্রজাপতির মেলা বসে রোজ। সৌখিন ফটোগ্রাফারদের জন্য চমৎকার এক লোকেশন। দর্শনার্থীদের জন্য আছে কয়েকটি আকর্ষনীয় দোলনা এবং মাছ, পাখী, জীব-জন্তুর কৃত্তিম চিড়িয়াখানা। এছাড়াও বিশাখা সাগরে আছে নৌভ্রমনের জন্য অন্যতম আকর্ষণ সোনার তরী এবং সপ্তডিঙ্গা। অপরুপ স্থাপত্য আধুনিক শহীদ মিনার আপনাকে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্থম্ভিত করে দিবে।
 এই শীতের মৌসুমে হাজারো ফুলের মেলা দেখতে চলুন ঘুরে আসি মহেড়া জমিদার বাড়ি। অপরুপ সাঁজে সাজানো এই জমিদার বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পিকনিক এবং বিভিন্ন নাটক বা ছবির শুটিং। ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এখানে প্রবেশের শুভেচ্ছা মূল্য মাত্র ২০ টাকা। পিকনিক বা শুটিং স্পট ভাড়া দেওয়া হয় আলোচনা সাপেক্ষ্যে। আর খাবার ও পানীয়ের জন্য আছে স্বল্প মূল্যের ক্যান্টিন সুবিধা। আগেই অর্ডার দিলে আপনার পছন্দের মেনু অনুযায়ী যে কোন খাবার সরবরাহ করা হয়। তাহলে আর দেরী নয় চলুন আজই ঘুরে আসি। ও আপনি যদি জমিদার বাড়িতে পূর্ণিমা স্নান বা রাত্রীযাপন করতে চান তার জন্য এসি/নন এসি ডাক বাংলোর সুব্যবস্থা আছে। খুব সকালে এবং বিকেলে দেখতে পাবেন পুরুষ এবং মহিলা পুলিশের মাঠ প্রশিক্ষণ কসরত।
 যেভাবে যেতে হবে- ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষ্যমান সিএনজি বেবীটেক্সীযোগে (ভাড়া ৭৫ টাকা, শেয়ারে জন প্রতি ১৫ টাকা) ০৩ কিঃমিঃ পূর্ব দিকে মহেড়া জমিদার বাড়ি । মহাসড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেড়া, টাঙ্গাইল নামে দিক নির্দেশনা ফলক (বিশাল সাইনবোর্ড) আছে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন তারা যে কোন ঢাকাগামী বাসে টাঙ্গাইল পার হয়ে ১৭ কিঃমিঃ পর নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নেমে একইভাবে যেতে পারেন।
Share:

Thursday, December 10, 2020

২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ - 201 Dome Mosque - Tangail

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় ২০১ গম্বুজ ও ৪৫১ ফুট উঁচু মিনার বিশিষ্ট একটি সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতারা আশা করছেন যে নান্দনিকভাবে সুন্দর এই মসজিদটি সবচেয়ে গম্বুজ মসজিদ হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তালিকাভুক্ত হতে চলেছে।

জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্থাপত্যের অপূর্ব মসজিদ।



রফিকুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট মসজিদটি নির্মাণ করছে এবং মসজিদটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (সিবিএ) সাবেক সভাপতি ২০১২ সালের প্রথম দিকে নান্দনিকভাবে মনোরম মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তার মা রিজিয়া খাতুনের দ্বারা।

ট্রাস্টের সদস্য ও রফিকুলের ছোট ভাই আব্দুল কাদের বলেন, মসজিদের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ চলছে।

কাদের বলেন, "আমার বড় ভাই গ্রামের মসজিদে জায়গার ঘাটতি দেখে মসজিদ নির্মাণের কথা ভেবেছিলেন। তিনি গ্রামবাসীদের কাছে তার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং মসজিদটি নির্মাণে তাদের সাহায্য চান। স্থানীয়রা তাকে এটি নির্মাণে তাদের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন," বলেন কাদের। .

তিনি বলেন, "পৃথিবীতে অনেক সুন্দর এবং বড় মসজিদ রয়েছে। তবে আমাদের মসজিদের পার্থক্য হল এটি 201 গম্বুজ এবং যতদূর আমরা জানি পৃথিবীতে এত গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নেই।"

শেষ হলে ঝিনাই নদীর তীরে ৪৫০ ডেসিমেল জমির ওপর নির্মিত দোতলা মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৪৪ ফুট এবং প্রস্থ একই।

মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি 81 ফুট উঁচু এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজের চারপাশে 17 ফুট উঁচু 200টি অন্যান্য গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে।

চারটি মিনার, যার প্রতিটি 101 ফুট উঁচু, ইতিমধ্যে মসজিদের চার কোণে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও চারটি মিনার, প্রতিটি ৮১ ফুট উঁচু, পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে।

মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি 451 ফুট মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে যা 57 তলা ভবনের মতো লম্বা হবে এবং 50 তলা পর্যন্ত লিফট সুবিধা থাকবে। নির্মাণ শেষ হলে, মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনারের (২৪০ ফুট) চেয়েও উঁচু হবে। 

মসজিদের মূল প্রবেশদ্বার নির্মাণে মোট ৫০ মণ পিতলের ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে এবং মিশর থেকে আনার পর মসজিদে বিভিন্ন ধরনের টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে দেয়ালের চারপাশে টাইলসের সারিও স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা হয়েছে।   

সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলেও মসজিদের ভেতরে এক হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক পাখাও বসানো হবে। 

মসজিদের বাম পাশে মাজারের মতো একটি স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। সেখানে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাকে সমাহিত করার কথা রয়েছে।

ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মসজিদটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়ে বিশ্ব মসজিদের ইতিহাসে স্থান করে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে, মসজিদের সামনে অবস্থিত নবাব রেস্তোরাঁর মালিক নুর আলম জানান, প্রতিদিন বিশেষ করে শুক্রবারে জেলার বাইরে থেকে শত শত মানুষ মসজিদ পরিদর্শনে আসেন এবং নামাজ আদায় করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আমলা, বিদেশী কূটনীতিক এবং ইসলামিক পণ্ডিতরাও এটি পরিদর্শন করেছেন।

একদল লোক নিয়ে মসজিদ পরিদর্শনে আসা আবদুল হালিম সরকার জানান, অন্যদের কাছ থেকে শুনে মসজিদটি দেখতে এসেছেন। "এটি আমাদের দেখা সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলির মধ্যে একটি এবং আমরা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম," তিনি যোগ করেছেন।  

দেশ-বিদেশের অতিথিদের নামাজ আদায় ও মসজিদ পরিদর্শনের সুবিধার্থে মসজিদ সংলগ্ন একটি হেলিপ্যাডও নির্মাণ করা হয়েছে।

মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি ছয়তলা ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনে দুস্থ মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে হাসপাতাল, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন করা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য সুবিধাও থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতারা।    

কাজ শেষ হলে পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন বলেও আশা করছেন তারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্ট নাগরিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

Share:

Monday, November 23, 2020

Tangail DC Lake

 





একটি পারিবারিক বিনোদনের ভিন্নমাত্রার ভিন্নজগত -"ডিসি লেক" টাঙ্গাইল।

Facebook page:

DC Lake,Tangail - ডিসি লেক,টাঙ্গাইল

কিভাবে যাওয়া যায়:

নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে শামছুল হক তোরণ পার হয়ে ডান দিকে (টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের পাশেই)

Share:

Wednesday, November 22, 2017

চলুন ঘুরে আসি নাগরপুর জমিদার বাড়ি (চৌধুরী বাড়ী) কমপ্লেক্স

ঊনবিংশ শতাব্দী । ইতিহাস থেকে যতদুর জানা যায় – সুবিদ্ধা-খাঁ-র সূত্র ধরেই চৌধুরী বংশু নাগরপুরে জমিদারী শুরু করেন। চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ যদুনাথ চৌধুরী। প্রায় ৫৪ একর জমির উপর জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের বংশক্রমে দেখা যায় – এমন তার তিন ছেলেঃউপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী ।

বৃটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন মুখীন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ।তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী। পাশ্চত্য এবং মোঘল সংস্কৃতির মিশ্রনে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এই বৈঠকখানা বিল্ডিং এর উপরে ছিল নহবতখানা।



সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রতিদিন ভোর সকালে সানাই-এর ভৈরবী ধ্বনীতে চৌধুরী বংশের তথা এলাকার প্রজাবৃন্দের ঘুম ভাঙ্গত। শোনা যায় রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরীকে নাগরপুরে রেখে সম্পূর্ণ রাজধানী কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। চৌধুরী বাড়ীর রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত- ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে সৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নিল বাঘ (কেতকী) এবং সিংহ(দ্যুতি)। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ীর এই মুল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ।

চৌধূরীবাড়ীর অন্যান্য স্থাপনা

ঝুলন দালান: প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন শিল্প কর্মে মন্ডিত চৌধুরী বংশের নিত্যদিনের পূজা অনুষ্ঠান হত এই ঝুলন দালানে। বিশেষ করে বছরে শ্রাবনের জ্যোৎস্না তিথিতে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাটক, যাত্রা মঞ্চায়িত হত। এখানেই চৌধুরী বংশের শেষ প্রতিনিধি মিলন দেবী (মিলন কর্ত্রী) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চৌধুরীদের উপাসনা বিগ্রহ ‘‘বৃন্দাবন বিগ্রহ’’ -এর নিরাপত্তা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।

ঘোড়ার দালান

জমিদারী পরিচালনা এবং বাবসায়িক প্রয়োজনে চৌধুরীবাড়ীতে সুঠাম সুদৃশ্য ঘোড়া পোষা হত। আর এই ঘোড়া এবং তার তদারকীতে নিয়োজিতদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় শৈল্পিক কারুকাজ খচিত এই স্থাপনা। যা জমিদারদের ঘোড়ার দালান হিসাবে পরিচিত।

Share:

Thursday, November 2, 2017

চলুন ঘুরে আসি করটিয়া জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের যে কয়টি জমিদার বাড়ী সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাথে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে করটিয়া জমিদার বাড়ী তার মধ্যে অন্যতম। টাঙ্গাইল জেলায় বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ী রয়েছে কিন্তু সব গুলোকে ছাপিয়ে ইতিহাস আর ঐতিয্যে করটিয়া জমিদার বাড়ী আলাদা স্থান করে নিয়েছে। টাঙ্গাইল শহর হতে ১০ কিঃ মিঃ দূরে পুটিয়া তীর ঘেসে আতিয়ার চাঁদ খ্যাত জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী জমিদার বাড়ী। প্রাকৃতিক ও নিরিবিলি পরিবেশের এই জমিদার বাড়ীটি প্রায় ১.০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ০.৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা। যেখানে রয়েছে রোকেয়া মহল, রানীর পুকুর ঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়ী সংলগ্ন স্থাপতের আদলে গড়া মসজিদ, একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য।মসজিদটিতে দুই সারিতে আটটি গম্বুজ রয়েছে। প্রথম সারিতে পাঁচটি একই আকারের ছোট গম্বুজ রয়েছে এবং দ্বিতীয় সারির তিনটি গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড়। মসজিদের পূর্বদিকে পুরাতন সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি ১৫ ফুট উঁচু মিনার রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণের সময় সম্পর্কে জানা যায়নি।  মোঘল ও চৈনিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জমিদার বাড়িটি প্রথম দর্শনেই আপনার মন কেড়ে নেবে। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্য শিল্পের নির্দেশন রোকেয়া মহল যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে।



জমিদারবাড়ির মূল ফটকটি বর্তমানে তালাবদ্ধ রাখা হয় এবং বাইরের কাউকে এখানে ঢুকতে দেওয়া হয়না। তাই এই জমিদারবাড়িটি দেখতে গেলে নিশ্চিত করে যাওয়া উচিত যে আপনি ভিতরে ঢুকতে পারবেন। অন্যথায় এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি আপনাকে না দেখেই ফিরতে হবে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় যে, বাংলা বৈশাখ মাসের এক এবং বারো তারিখে ছাড়াও দুই ঈদের দিন জমিদারবাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।




কিভাবে যাওয়া যায়

১। মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে নিরালা, ঝটিকা, ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন বাসে ১৩০/- টাকা থেকে ১৬০/- টাকা ভাড়ায় প্রায় তিন ঘণ্টায় করটিয়ায় পৌছাতে পারবেন। করটিয়া বাস স্টপেজের জিপিএস অবস্থান হল  (২৪°১২’৩২.০৬”উ, ৮৯°৫৮’৫০.৩৩”পু)।

 ২। করটিয়া স্টপেজ থেকে রিকশা অথবা অটোরিকশায় ১০/- টাকা থেকে ১৫/- টাকা ভাড়ায় প্রায় ১০ মিনিটে জমিদারবাড়িতে পৌছাতে পারবেন। জমিদারবাড়ির জিপিএস অবস্থান হল (২৪°১৩’২৪.৫৯”উ, ৮৯°৫৮’৪৩.২৫”পু)  এবং মসজিদের জিপিএস অবস্থান হল (২৪°১৩’২০.০৮”উ, ৮৯°৫৮’৪৬.৭৪”পু


Share:

চলুন ঘুরে আসি হেমনগর জমিদার বাড়ি

জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী এই জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন (১৮৯০)। তিনি তার এলাকার মানুষকে কঠোর হাতে শাসন করতেন। জমিদারবাড়ি অতিক্রম করতে হলে তাদেরকে খালি পায়ে ক্রমাগত মাথা ঝুঁকিয়ে আনুগত্য প্রকাশের পাশাপাশি উল্টো হয়ে হাটতে হত। এসকল নিয়ম মানতে বাধ্য করা হত তাদের।হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৮০ সালে (১২৮৬ বঙ্গাব্দ) মধুপুর উপজেলার আমবাড়িয়া রাজবাড়ি ত্যাগ করে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের সুবর্ণখালি গ্রামে নতুন রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি সেখান থেকেই জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। সুবর্ণখালি ছিল যমুনা তীরের প্রসিদ্ধ নদীবন্দর। তখন কলকাতার সাথে সহজ যোগাযোগের কারণে সুবর্ণখালিতে আসাম ও কলকাতার স্টীমার আসতো। হেমচন্দ্র চৌধুরী সহ কয়েকজন হিন্দু জমিদারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯০৫ সালে ময়মনসিংহ হতে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন সম্প্রসারণ করা হয়। যা রেল ও স্টীমার যোগে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগকে সহজ করে তোলে। হেমবাবু সুবর্ণখালি হতে সরিষাবাড়ি উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে হেরিংবন্ড করে টমটম বা পালকিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। জানা যায়, এটিই গোপালপুর উপজেলার প্রথম পাঁকা সড়ক। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশকে যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হয় সুবর্ণখালি নদীবন্দর ও হেমচন্দ্রের রাজবাড়ি। সুবর্ণখালি ঐতিহ্য হারিয়ে আজ সোনামুই/সোনামুখী নাম ধারণ করে টিকে আছে।

এছাড়াও জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর আরেকটি বাড়ি ছিল যা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার বৈলর ইউনিয়নে অবস্থিত।



বিবরণ

হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৯০ সালে (১২৯৬ বঙ্গাব্দ) শিমলাপাড়া মৌজায় নতুন একটি দ্বিতল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এটি সুবর্ণখালি থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত। উঁচু ও প্রসস্থ দেওয়ালে ঘেরা বাড়ির ভেতরে সুপেয় পানির জন্য একাধিক কূপ খনন করা হয়েছিল। সেখানে ছিল চিড়িয়াখানা, পূজাম-প, হাতিশালা ও ফুলের বাগান। পরীর দালানের সামনেই ছিল দ্বিতল নাটঘর। বাড়িটির ভেতরে ও সামনে রয়েছে পাকা সান (ইট ও সুরকির) বাঁধানো ঘাটসহ বিশাল পুকুর (দিঘি)। পরীর দালানের আশেপাশে স্বজনদের জন্য সান বাঁধা ঘাট সহ দিঘি ও পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।



কারুকার্য

ভবনের দেয়াল, পিলার, ফটকে রঙ্গিন কাঁচ ব্যবহার করে ফুল, তারা, গাছ ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। অত্যন্ত কারুকার্য মণ্ডিত, দামি কড়ি ও অপূর্ব পাথরে মোড়ানো অগ্রভাগে দুইটি পরীর ভাস্কর্যসমৃদ্ধ বাড়িটি লতাপাতার অপরুপ নকশায় তৈরি। দিল্লী ও কলকাতার কারিগর ও রাজমিস্ত্রি দিয়ে ইটসুরকির তৈরি বাড়িটি দেখে মনে হয় যেন শিল্পকর্ম। ৬০ একর জায়গার উপর শত কক্ষবিশিষ্ট এ বাড়িটিকে ডাকা হয় পরীর দালান নামে।



বর্তমান অবস্থা

এই জমিদারবাড়ির মূল ভবনটি বর্তমানে হেমনগর কলেজ করা হয়েছে। রাজবাড়ির অদুরে দক্ষিণদিকে গড়ে ওঠে বিশাল (হেমনগর বাজার) হাট। এলাকাটি হেমচন্দ্র চৌধুরীর নামানুসারে হেমনগর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে (১৯৮৯ সালে) বাড়িটিতে একটি মহাবিদ্যালয় (ডিগ্রী কলেজ) স্থাপন করা হয়েছে।


Share:

Wednesday, November 1, 2017

চলুন ঘুরে আসি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি

কিভাবে যাওয়া যায়

মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ধনবাড়ী সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। বিনিময়, মহানগর কিংবা শুভেচ্ছা পরিবহনে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছাতে পারবেন ধনবাড়ী। ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে অদূরেই জমিদার বাড়ী, ইচ্ছে করলে হেঁটে কিংবা রিকশায় পৌঁছাতে পারেন সেখানে।

বিস্তারিত


নবাব জমিদার বাড়ি ধনবাড়ীর একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নবাব প্যালেস ও বলা হয়। মূলত এর নাম নবাব বাড়ি বা নবাব প্যালেসই ছিল। কিন্তু বাড়িটি জমিদারের হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘জমিদার বাড়ি’ বলেই ডাকতেন। অতঃপর তা স্থানীয়দের কাছে জমিদার বাড়ি বলেই অধিকতর পরিচিতি লাভ করে। তাই ধনবাড়ীর যে কাউকে জমিদার বাড়ি বললেই দেখিয়ে দিবে বাড়িটিতে যাওয়ার পথ। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯২৯) যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। তাঁরই অমর কৃর্তি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস।



 

ইতিহাসঃ

নবাব জমিদারবাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই জমিদার বাড়ি খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রণ করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ লর্ড সে সময় স্টিমার দিয়ে বৈরান নদীর কয়ড়া ঘাটে আসেন। জানা যায়, সে সময় ব্রিটিশ লর্ডকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ৩০টি হাতির বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদেশের পরিবেশ-প্রকৃতিতে এককালে যে প্রচুর সংখ্যক বন্যপ্রাণী ছিল এই ঘটনা সেই স্বাক্ষ্যও দিচ্ছে।

নওয়াব আলী চৌধুরীর স্ত্রী ছিল তিন জন। বগুড়ার মেয়ে আলতাফুননাহারকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। আলতাফুননাহার ছিলেন নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে। আবদুস সোবহান ছিলেন বগুড়ার জমিদার। জমিদার নওয়াব আলীর সাথে ঈশা খাঁর বংশেরও কিছু সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তিনি ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সাইয়েদা আখতার খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নওয়াব আলীর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন সৈয়দা সাকিনা খাতুন চৌধুরানী। সাকিনা খাতুনের বংশপরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী নওয়াব আলী ১৯২৯ সালে মৃত্যুবরণ করার সময় তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত একমাত্র ছেলে  সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম ওয়াকফ নামায় লিখে যান। এই সৈয়দ হাসান আলীর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট’। বর্তমানে রিসোর্টটির মালিকানা রয়েছে হাসান আলীর একমাত্র কন্যা সৈয়দা আশিকা আকবরের নামে। যে কারণে এই জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্নগুলো আজও টিকে আছে সুন্দরভাবে। আর রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছে লাইট হাউস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।



 

দর্শনীয় স্থানঃ

বংশাই ও বৈরান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন জমিদারবাড়িটি অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং কারুকার্যে সত্যিই মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর। তবে রিসোর্ট তৈরির পর নবাব প্যালেসে বেড়েছে চাকচিক্য এবং আধুনিকতা। চার গম্বুজবিশিষ্ট অপূর্ব মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই শতাব্দীপ্রাচীন নবাব প্যালেস।

পুরো নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেসটি প্রাচীরে ঘেরা। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দাসংবলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দুই পাশে প্রহরীদের জন্য রয়েছে দুটি কক্ষ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী  ব্রিটিশ গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন। প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর; যা এখনো আপনি দেখতে পাবেন।

ভবনের দরজা ঠিক মাঝ বরাবর নয়। এর কার্নিশে নানা ধরনের লতাপাতার নকশা আঁকানো। ভবনটিতে রয়েছে চারটি বৃহৎ কক্ষ ও কিছু ক্ষুদ্রাকার কক্ষ।দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বারান্দাতেও শোভা পাচ্ছে মোগল আমলের নবাবি সামগ্রী, সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মোগল আমলের আসবাবপত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসকান একেবারে পূর্বদিকে দেখা মিলবে শতাধিক বছরের পুরনো ৩০ বিঘার বিশালাকার দিঘি, যার কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া দায়। দিঘীর পাড়ে রয়েছে ছায়ায় ঘেরা গাছপালার সমারোহ। দিঘীতে শীতকালে নানা ধরনের পাখি আসে। ফলে শীতকালে ভ্রমণে বাড়তি কিছু আনন্দ যোগ হয়ে থাকে। সেখানে দর্শনার্থীদের ঘোরার জন্য রয়েছে দুটি সাম্পান, চড়তে পারেন আপনিও।

তাছাড়া নবাবি কায়দায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন গারোদের সংস্কৃতি ও নাচ। এ জন্য আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখানে আরো দেখতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।

পুরো জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখার পর, বের হয়ে আসলে সামনেই দেখা মিলবে নওয়াব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন’। শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের সাক্ষী হিসেবে আজও সুনামের সাথে চলছে ইনস্টিটিউশনটি।



 

রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ৫০ টাকা।

 

যেখানে থাকবেন

এখানে থাকবেন আপনি নবাবি স্টাইলে। তবে সেটা নির্ভর করবে আপনার সামর্থ্যের ওপর। রয়েছে চার ধরনের আবাসন ব্যবস্থা। মঞ্জিল (মূল রাজপ্রাসাদ), প্যালেস (কাচারি ঘর), ভিলা (২০০ বছরের পুরোনো টিনশেড ভবন) এবং কটেজ (সম্প্রতি নির্মিত টিনশেড বাংলো)। মঞ্জিল এবং প্যালেসের খাট, সোফাসহ সব আসবাবপত্র সেই প্রাচীন আমলের যা নবাবরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু ভিলা এবং কটেজে নবাবদের আসবাবপত্র পাওয়া যাবে না। ভাড়া এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা। দল বেঁধে গেলে পাওয়া যাবে বিরাট ছাড়। তা ছাড়া থাকতে পারেন ধনবাড়ী নওয়াব প্যালেসের অদূরে মধুপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত আদিত্য, সৈকত এবং ড্রিমটাচ নামের তিনটি আবাসিক হোটেলে। এগুলোতে রয়েছে এসি এবং নন এসি রুমের সুন্দর ব্যবস্থা।

Share:
Powered by Blogger.

The Best Places To Visit in Tangail